সাকিব আল হাসানের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সমান। তার আয়ের প্রধান উৎস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ এবং ব্যক্তিগত ব্যবসা। সাকিবের সম্পদ তাকে ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিত্বদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিস্তারিত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পোস্টার বয় ও অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এই খেলোয়াড়ের ক্রিকেট ছাড়াও রয়েছে ব্যবসা, ব্র্যান্ড চুক্তি এবং রাজনীতিতে সরব উপস্থিতি।
মাঠ ও মাঠের বাইরে সাফল্য
সাকিব কেবল ক্রিকেট মাঠেই সীমাবদ্ধ নন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করেছেন, যা তাঁর আয়ের একটি বড় উৎস। এছাড়া ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত তিনি এবং সম্প্রতি রাজনীতিতে পা রেখে মাগুরা ১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বার্ষিক আয়
২০২৩ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, সাকিব আল হাসানের বার্ষিক আয় প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, যার মধ্যে ক্রিকেট খেলে তিনি আয় করেন ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি। স্থায়ী আমানত থেকে সুদের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লাখ টাকা আয় করেন।
মোট সম্পদ
সাকিবের মোট সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ ৪৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা), যা তাঁকে দেশের অন্যতম ধনী ক্রীড়াবিদ হিসেবে চিহ্নিত করে। সাকিব আল হাসান ক্রিকেট থেকে শুরু করে ব্যবসা ও রাজনীতি সব ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, যা তাঁকে বাংলাদেশের গর্ব করে তুলেছে।
সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটার, তার সম্পত্তি ও আর্থিক অবস্থা নিয়ে হলফনামায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন।
- বৈদেশিক মুদ্রা: তার কাছে ২৪,২৬১ মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে।
- শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ: সাকিবের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৪ টাকা।
- সোনা ও আসবাবপত্র: তার কাছে রয়েছে ২৫ ভরি সোনা, এবং আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
ঋণ
- মোট ঋণ: সাকিবের মোট ঋণের পরিমাণ ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকা।
- ব্যাংক ঋণ: ইস্টার্ন ব্যাংকের কাছে ১ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার ৩৬৩ টাকা ঋণ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ ও পারিবারিক তথ্য
সাকিবের বাংলাদেশের মধ্যে কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। তবে তার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন, যেখানে একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়ির সঠিক মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
সাকিব আল হাসান নিজেকে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই আর্থিক বিবরণ সাকিবের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তার ব্যক্তি জীবনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা দেয়।
1. ক্রিকেট থেকে সাকিব আল হাসানের আয়
সাকিব আল হাসানের আয়ের মূল উৎসগুলো হলো তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা।
- প্রাইজমানি:
আন্তর্জাতিক এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বিভিন্ন ম্যাচে পারফরম্যান্সের জন্য তিনি পুরস্কার অর্থও পান। - বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (BCB):
সাকিব কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় বেতন পান। এই বেতন টেস্ট, ওয়ানডে, এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। - ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ:
- ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL): সাকিব নিয়মিত আইপিএলে খেলে আসছেন এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলে উল্লেখযোগ্য সম্মানী পেয়েছেন।
- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL): তিনি প্রতিবারই বিপিএলে উচ্চমূল্যের খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হন।
- ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (CPL) এবং পাকিস্তান সুপার লিগ (PSL): এখান থেকেও তিনি উল্লেখযোগ্য সম্মানী আয় করেন।
- স্পন্সরশিপ ও বিজ্ঞাপন:
সাকিব বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে একাধিক ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর। ব্র্যান্ড চুক্তিগুলো তার আয়ের একটি বড় অংশ।
2. ব্র্যান্ড অনুমোদন
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল তারকা এবং ব্র্যান্ডিং জগতে একটি প্রভাবশালী নাম। তার আয়ের একটি বড় অংশ আসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনুমোদন চুক্তি থেকে। সাকিবের ব্র্যান্ড অনুমোদন সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য:
ব্র্যান্ড অংশীদারিত্ব:
- Oppo: সাকিব এই আন্তর্জাতিক স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর। তার জনপ্রিয়তা ব্র্যান্ডটিকে দেশের বাজারে আরও সুপরিচিত করেছে।
- Daraz: ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সাকিবের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রচারণা বাড়িয়েছে।
- MyGP (Grameenphone): গ্রামীণফোনের বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে সাকিব ছিলেন মুখ্য।
- LankaBangla Finance: এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন।
আয়ের বিবরণ:
- ব্র্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে সাকিব লক্ষাধিক ডলার আয় করেন।
- তার ব্র্যান্ড ভ্যালু ২০২৪ সাল নাগাদ বেড়ে প্রায় ৪০ লাখ ডলার ছুঁয়েছে।
3. ব্যবসায়িক কার্যক্রম
সাকিব আল হাসান শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠেই নয়, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সফল। তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ তাকে আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিভিন্ন খাতজুড়ে সফল উদ্যোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি:
ব্যবসায়িক কার্যক্রম:
- Sakib’s Dine: সাকিবের মালিকানাধীন একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট চেইন, যা গুণগত মানের খাবারের জন্য পরিচিত।
- Burak Commodities: আমদানি ও রফতানি নির্ভর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- Sakib Al Hasan Foundation: একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যা সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।
এছাড়াও, সাকিব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণায় যুক্ত থেকে তার আয়ের পরিধি বাড়িয়েছেন। এসব উদ্যোগ তাকে ক্রীড়াজগৎ এবং ব্যবসায়িক জগতের অনন্য এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছে।
4. সম্ভাব্য মোট সম্পদ
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল এবং জনপ্রিয় অলরাউন্ডার, তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যবসা ও ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করেছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাকিবের মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪০০ কোটি টাকা)।
তাঁর আয়ের বড় অংশ আসে ক্রিকেট থেকে, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফি, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চুক্তি (যেমন আইপিএল, পিএসএল, সিপিএল), এবং স্থানীয় লিগ থেকে আয় করেন। পাশাপাশি, সাকিব বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন।
সাকিবের ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছে তার নিজস্ব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং অন্যান্য বিনিয়োগ। এছাড়াও, তিনি দাতব্য কাজে নিয়োজিত এবং “সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন” এর মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখছেন। এত বড় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, তিনি দেশের প্রতি দায়বদ্ধ এবং ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত।
সাকিবের আর্থিক সাফল্য তাকে শুধু একজন ক্রীড়াবিদ নয়, বরং বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায়ও স্থান করে দিয়েছে। তার সফল ক্যারিয়ার, ব্র্যান্ডিং, এবং ব্যবসা তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেটারদের কাতারে নিয়ে গেছে।