ভারত সফরে নিজেদের প্রমাণ করতে মরিয়া বাংলাদেশ দল, বিশেষ করে কারণ টাইগাররা এখনও টেস্ট ক্রিকেটে তাদের প্রতিবেশী ভারতকে কখনও হারাতে পারেনি। তবে, সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরের টেস্ট সিরিজে সফলতা পাওয়ায় দলটি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এবং ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য উদগ্রীব।ইতিহাসের পাতা বলছে, ভারতের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশ সবসময়ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশি ব্যাটাররা মাত্র ছয়টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছে। ভারতের দক্ষ বোলিং লাইনআপের সামনে রান সংগ্রহ করা বরাবরই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আসন্ন টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দল নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ খুঁজছে। ব্যাটাররা তাদের সেরাটা দিয়ে এই তালিকায় নতুন সেঞ্চুরি যোগ করার আশায় থাকবে। ভারতের বিপক্ষে প্রতিটি রানই হবে গুরুত্বপূর্ণ, আর দলটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশি ব্যাটারদের করা সেরা ৫ ইনিংসের তালিকা তুলে ধরা হলো।
৫. মুশফিকুর রহিম, চট্টগ্রাম, ২০১০: ১০১
খেলোয়াড় | ম্যাচ | রানের সংখ্যা | ইন্ডিয়ার সাথে সেরা ইনিংস |
মুশফিকুর রহিম | ৮৬ | ৫,৫৫৩ | ১০১ |
২০১০ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করেছিল। প্রথম ইনিংসে শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত বড় সংগ্রহ গড়ে তোলে। বাংলাদেশ তার জবাবে মাত্র এক রানে পিছিয়ে থেকে ইনিংস শেষ করে। তবে তৃতীয় ইনিংসে ভারত বড় সংগ্রহ গড়ায় ম্যাচটি বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়।বাংলাদেশের ইনিংসে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিম সাহসী ১০১ রানের ইনিংস খেলেন। তবে অন্য ব্যাটারদের কাছ থেকে তিনি তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। পঞ্চম দিনের গভীর পর্যন্ত লড়াই করা রহিমই শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন, আর বাংলাদেশ ম্যাচটি হারিয়ে বসে।
৪. মুশফিকুর রহিম, হায়দ্রাবাদ, ২০১৭: ১২৭
খেলোয়াড় | ম্যাচ | রানের সংখ্যা | ইন্ডিয়ার সাথে সেরা ইনিংস |
মুশফিকুর রহিম | ৮৬ | ৫,৫৫৩ | ১২৭ |
২০১৭ সালের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ছিল রানের বন্যায় ভরা। ওই ম্যাচে ভারত ৬৮৭ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলে, যেখানে বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি এবং মুরলি বিজয় ও ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরিগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান একটি দৃঢ় পার্টনারশিপ গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এক পর্যায়ে রহিমকে আবারও টেল এন্ডারদের সঙ্গে ব্যাট করতে হয়। ১২৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে তিনি শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন। মুশফিকের অসাধারণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পঞ্চম দিনে ম্যাচটি হেরে বসে।
Also Read. বিরাট কোহলি বনাম শচীন টেন্ডুলকার
৩.আমিনুল ইসলাম, ঢাকা, ২০০০: ১৪৫
খেলোয়াড় | ম্যাচ | রানের সংখ্যা | ইন্ডিয়ার সাথে সেরা ইনিংস |
আমিনুল ইসলাম | ১৩ | ৫৩০ | ১৪৫ |
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে আমিনুল ইসলাম ৪ নম্বরে ব্যাট করে ১৪৫ রান করেন, যা ছিল একটি ঐতিহাসিক অর্জন। তার এই ইনিংসের সাহায্যে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান তুলতে সক্ষম হয়, যা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য ছিল একটি স্বপ্নময় শুরু।তবে এই স্বপ্ন বেশিদিন টেকেনি। ভারতের ৪২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে অলআউট হয়ে যায়। যদিও শুরুটা ছিল উজ্জ্বল, তবে সেই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ, এবং তাদের জন্য শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ছিল হতাশাজনক।
২. তামিম ইকবাল, মিরপুর, ২০১০: ১৫১
খেলোয়াড় | ম্যাচ | রানের সংখ্যা | ইন্ডিয়ার সাথে সেরা ইনিংস |
তামিম ইকবাল | ৭০ | ৫,১৩৪ | ১৫১ |
প্রথম ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ ৯৬ রানে অপরাজিত থাকলে, শচীন টেন্ডুলকার এবং রাহুল দ্রাবিড় সেঞ্চুরি করে ভারতকে বিশাল লিড এনে দেন। এর পর বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তামিম ইকবাল, যিনি ওপেনিংয়ে অসাধারণ ১৫১ রানের ইনিংস খেলেন এবং বাংলাদেশকে ম্যাচে ধরে রাখেন। দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশ ৩ এক্স ৯০ থেকে ৩১২ রানে অলআউট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ইনিংস পরাজয় থেকে রক্ষা পায়, তবে জহীর খান বোলিংয়ে বিধ্বংসী হয়ে টেলএন্ডারদের দ্রুত সরিয়ে দিয়ে সাত উইকেট লাভ করেন।
১. মোহাম্মদ আশরাফুল, চট্টগ্রাম, ২০০৪: ১৫৮*
খেলোয়াড় | ম্যাচ | রানের সংখ্যা | ইন্ডিয়ার সাথে সেরা ইনিংস |
মোহাম্মদ আশরাফুল | ৬১ | ২৭৩৭ | ১৫৮ |
২০০৪ সালে ভারত বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরটি আসে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটে, যখন তিনি এককভাবে ১৫৮ রানে অপরাজিত থেকে দলের আশা জাগান, তবে বাকি ব্যাটাররা উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হন।
প্রথম ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড় এবং গৌতম গম্ভীরের ২৫৯ রানের জুটি গড়ার পর, বাংলাদেশের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে, যদিও আশরাফুল অসাধারণ ব্যাটিং করেন। ভারতের বিশাল সংগ্রহের কাছে বাংলাদেশ চাপের মধ্যে ছিল এবং তাদেরকে ফলোঅন করতে বাধ্য করা হয়। তৃতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দ্রুত ভেঙে পড়ে এবং ম্যাচটি ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে ফেলে। আশরাফুলের দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও বাংলাদেশ পুরোপুরি ম্যাচ থেকে সরে পড়ে।