ইনিংসের প্রথম ভাগে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে কিছুটা চাপের মুখে পড়ে রংপুর রাইডার্স। তবে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা খুশদিল শাহ আবারও দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান। তার মারমুখী ফিফটি এবং ইফতিখার আহমেদের সংগ্রামী ইনিংসে রংপুর পায় শক্তিশালী পুঁজি। জয়ের সুবাস পাচ্ছিল খুলনা টাইগার্স, তবে শেষদিকে তালগোল পাকিয়ে বসে। বোলারদের দৃঢ়তায় রংপুর তুলে নেয় টানা সপ্তম জয়।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২০তম ম্যাচে রংপুর রাইডার্স ৮ রানের জয় পেয়েছে। নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দল প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে সংগ্রহ করে ১৮৬ রান। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুলনা টাইগার্স আশা জাগালেও ৯ উইকেটে ১৭৮ রানেই থেমে যায়।
Also check: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL) 2025 live score
খুলনার ইনিংস শুরু হয়েছিল দুর্দান্তভাবে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় ওভারে দারউইন রাসোলি তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে নেন ১৪ রান। তবে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন আফগানিস্তানের এই ব্যাটার। আকিফ জাভেদ নিজের প্রথম ওভারেই তাকে বোল্ড করেন।
দুটি চার মেরে মিরাজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেন। নাহিদ রানাকে টার্গেট করে তিনি দুই ছক্কা ও একটি চার মারেন, পাওয়ার প্লেতেই দলকে পৌঁছে দেন পঞ্চাশ রানে। তবে অপর প্রান্তে নাইম শেখ ছিলেন ধীরগতির। প্রথম ১১ বলে তিনি করেন মাত্র ১৫ রান। দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন মিরাজ এবং তা বেশ সফলভাবেই চালিয়ে যান। শেষমেশ সাইফউদ্দিনের ফিরতি স্পেলে আউট হওয়ার আগে মিরাজ ২৪ বলে ৩৯ রান করেন, ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কা। অন্যদিকে, ইনিংস এগোতে থাকলে নাইমও ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরে পান।
মাত্র ৩৬ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেন নাইম শেখ। সেই ইনিংসের পথে নাহিদকে মারেন টানা চার ও ছক্কা। তবে এরপর বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। আফিফ হোসেনের ওভারে ছক্কা মারলেও, ওই একই ওভারে ৫৮ রান করা নাইমকে আউট করে রংপুর শিবিরে আশা ফেরান শেখ মাহেদি হাসান।
Also check:
তবে খুলনাকে সেই ধাক্কার প্রভাব বুঝতে না দিয়ে রংপুরের বোলারদের চাপে ফেলে প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালান আফিফ। তাকে সঙ্গ দেন আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ক্যামিও খেলা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, যিনি আকিফের এক ওভারে তিনটি চার হাঁকান। তবে নিজের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই আফিফকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মাহেদি। ১৮তম ওভারে মাত্র তিন রান দিয়ে খুলনাকে চাপে ফেলে দেন এই অফ স্পিনার। পরের ওভারে আকিফ দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ৬ রান দিয়ে তুলে নেন অঙ্কন ও ইমরুল কায়েসের উইকেট।
ছয় বলে ১২ রানের সমীকরণ মেলানোর দায়িত্ব ছিল খুলনার মোহাম্মদ নাওয়াজের ওপর। তবে ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করে সাইফউদ্দিন দুটি উইকেট তুলে নিয়ে রংপুরকে ৮ রানের দারুণ জয় উপহার দেন। তীরে গিয়ে তরী ডুবল খুলনার। আকিফ ৩ উইকেটে ২৯ রান দিয়ে রংপুরের সেরা বোলার হিসেবে উজ্জ্বল ছিলেন।
এর আগে রংপুর ব্যাট হাতে ভালো সূচনা করেছিল। স্টিভেন টেলর ও তৌফিক খান দুজনই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন। ৮ বলে ১৫ রান করা টেলরকে দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে বোল্ড করে খুলনাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আবু হায়দার রনি। চলমান বিপিএলে ভালো ফর্মে থাকা সাইফ হাসান এদিন ছন্দে ছিলেন না; হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাত্র ৭ রান করেন। তৌফিক খান কিছু বড় শট খেললেও রান রেট বাড়াতে ব্যর্থ হন, ফলে প্রথম ১০ ওভারে রংপুর সংগ্রহ করে ৬৮ রান।
আক্রমণে ফিরে তৌফিককে (৩০ বলে ৩৬) সাজঘরের পথ দেখান আবু হায়দার। এরপর রংপুরের ইনিংসে ইফতিখার ও খুশদিলই ছিলেন মুখ্য। দারুণ ছন্দে থাকা পাকিস্তানের এই দুই ক্রিকেটার ক্রিজে এসে ইতিবাচক ব্যাটিং শুরু করেন। নাসুম আহমেদকে টানা চার ছক্কা মেরে রংপুরের বড় স্কোরের পথ সুগম করেন খুশদিল। মাত্র ২২ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ১১৫ রানের চতুর্থ উইকেটে তিনি ছিলেন বেশি আগ্রাসী। ইফতিখার ৪৩ রান করেন ৩৬ বলে। ইনিংসের শেষ ওভারে চার ও ছক্কা মেরে ৩৫ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন খুশদিল। খুলনার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন দুই পেসার আবু হায়দার ও হাসান।
Also Read: বিদেশি লিগে খেলতে পারেন ১২-১৫ বাংলাদেশি ক্রিকেটার, আশাবাদী রিশাদ