একটি রোমাঞ্চকর ফাইনাল
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ, যা আনুষ্ঠানিকভাবে রিলায়েন্স বিশ্বকাপ নামে পরিচিত, ছিল এই প্রতিযোগিতার চতুর্থ সংস্করণ। ৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে একটি বড় পরিবর্তন আসে – প্রতিপক্ষ দলের জন্য ওভার সংখ্যা ৬০ থেকে কমিয়ে ৫০ করা হয়। এই পরিবর্তনই ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করে। কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ফাইনালটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রোমাঞ্চকর ছিল, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ৭ রানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।
Read More:- বিপিএল ২০২৫ সূচি: ভেন্যু, দল, ম্যাচ এবং পয়েন্ট টেবিল
১৯৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনালের পথে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা ১৯৮৭ বিশ্বকাপে
তারিখ | স্থান | প্রতিপক্ষ | ফলাফল | ব্যবধান |
---|---|---|---|---|
৯ অক্টোবর | চেন্নাই | ভারত | জয় | ১ রানে |
১৩ অক্টোবর | চেন্নাই | জিম্বাবুয়ে | জয় | ৯৬ রানে |
১৮ অক্টোবর | ইন্দোর | নিউজিল্যান্ড | জয় | ৩ রানে |
২২ অক্টোবর | দিল্লি | ভারত | হার | ৫৬ রানে |
২৭ অক্টোবর | চণ্ডীগড় | নিউজিল্যান্ড | জয় | ২৭ রানে |
৩০ অক্টোবর | কটক | জিম্বাবুয়ে | জয় | ৭০ রানে |
৪ নভেম্বর | লাহোর | পাকিস্তান | জয় | ১৮ রানে |
৮ নভেম্বর | কলকাতা | ইংল্যান্ড | জয় | ৭ রানে |
১৯৮৭ বিশ্বকাপটি রাউন্ড-রবিন ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আটটি দল অংশগ্রহণ করে। দলগুলো ছিল ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড উভয়ই গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সেমি-ফাইনালে পৌঁছায়। অ্যালান বোর্ডার নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভারতকে ১ রানে পরাজিত করে। এরপর জিম্বাবুয়ে ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তারা ভারত থেকে একটি ম্যাচ হারে। শেষ দুটি ম্যাচে তারা নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করে সেমি-ফাইনালে যায়।
লাহোরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে, ডেভিড বুন (৬৫) ও মাইক ভেলেট্টা (৪৮) এর দারুণ ইনিংসে ২৬৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। এরপর ক্রেগ ম্যাকডারমটের পাঁচ উইকেট দলের জয় নিশ্চিত করে।
ইংল্যান্ডের যাত্রা ১৯৮৭ বিশ্বকাপে
ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচে ২ উইকেটে হারায়, তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে হার মানে। এরপর তারা শ্রীলঙ্কাকে হারায়, পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার হারে। গ্রুপ পর্ব শেষে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে পৌঁছায়।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেমি-ফাইনালে, গ্রাহাম গুচ (১০০) ও মাইক গ্যাটিং (৫৬) এর অসাধারণ ইনিংসে ২৫৪ রানের স্কোর করে। এডি হেমিংস ও নিল ফস্টার ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ২১৯ রানে ভারতকে গুটিয়ে দেয়।
১৯৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল – একটি অ্যাশেজের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা
১৯৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল: ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অস্ট্রেলিয়া | ২৫৩-৫ (৫০ ওভার) |
---|---|
ডেভিড বুন | ৭৫ (১২৫ বল) |
মাইক ভেলেট্টা | ৪৫ (৩১ বল) |
ডিন জোন্স | ৩৩ (৫৭ বল) |
ইংল্যান্ড | ২৪৬-৮ (৫০ ওভার) |
---|---|
বিল অ্যাথি | ৫৮ (১০৩ বল) |
অ্যালান ল্যাম্ব | ৪৫ (৫৫ বল) |
মাইক গ্যাটিং (অধিনায়ক) | ৪১ (৪৫ বল) |
অস্ট্রেলিয়া ৭ রানে জয়ী।
ম্যাচের প্রধান মুহূর্ত
অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে ব্যাটিং নেয়। ডেভিড বুন ও জেফ মার্শ প্রথম উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়েন। বুন ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। মিডল অর্ডারে ডিন জোন্স (৩৩) ও অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার (৩১) দলের স্কোর বাড়াতে সহায়তা করেন। তবে আসল ভূমিকা রাখেন মাইক ভেলেট্টা, যিনি ৩১ বলে অপরাজিত ৪৫ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ২৫৩ রানে পৌঁছে দেন।
ইংল্যান্ডের ইনিংস শুরুতেই ধাক্কা খায়। বিল অ্যাথি, গ্যাটিং ও ল্যাম্ব কিছুটা লড়াই করেন। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৩২তম ওভারে, যখন গ্যাটিং (৪১) বোর্ডারের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন। গ্যাটিংয়ের এই শট ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম বড় ভুল বলে বিবেচিত হয়।
শেষ ওভারে ১৭ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ, বিশেষত বোর্ডার (২/৩৮) ও স্টিভ ওয়াহর (২/৩৭) অসাধারণ স্পেল ইংল্যান্ডকে ২৪৬-৮ এ থামিয়ে দেয়।
১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেরা পারফর্মার
গ্রাহাম গুচ ৮ ম্যাচে ৪৭১ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ডেভিড বুন ৪৪৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। বোলিংয়ে ক্রেগ ম্যাকডারমট ১৮ উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন।
১৯৮৭ বিশ্বকাপে ভারতের পারফরম্যান্স
ভারত গ্রুপ পর্বে ৬টি ম্যাচের মধ্যে ৫টি জিতে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে। তবে সেমি-ফাইনালে তারা ইংল্যান্ডের কাছে ৩৫ রানে হারে। সুনীল গাভাস্কার ৭ ইনিংসে ৩০০ রান করেন এবং নভজ্যোত সিং সিধু ৫ ইনিংসে ২৭৬ রান সংগ্রহ করেন। বোলিংয়ে মানিন্দার সিং ১৪ উইকেট নিয়ে চমৎকার পারফরম্যান্স করেন।
Read More:- টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৫০ পাওয়া সেরা ১০ ব্যাটসম্যান
প্রশ্নোত্তর (Q&A)
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোন দল জিতেছিল?
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে ৭ রানে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।
১৯৮৭ বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রতি কত ওভার খেলা হতো, এবং এটি আগের থেকে কীভাবে ভিন্ন ছিল?
১৯৮৭ বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচ ৫০ ওভারের ছিল। এর আগে ওয়ানডে ম্যাচগুলো ৬০ ওভারের হতো। এটি ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং কোন ভুলের কারণে সমালোচিত হন?
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং ৩২তম ওভারে অ্যালান বোর্ডারের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন। এটি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল এবং ক্রিকেট ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৮৭ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী কারা ছিলেন?
১৯৮৭ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন গ্রাহাম গুচ (৪৭১ রান), এবং সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন ক্রেগ ম্যাকডারমট (১৮ উইকেট)।