ক্রিকেটের ডিআরএস

ক্রিকেটের ডিআরএস: নিয়ম, পদ্ধতি এবং কার্যপ্রণালী

ডিআরএস বা ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম হল ক্রিকেটে এমন একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রক্রিয়া, যা ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি ম্যাচের মাঠের আম্পায়াররা শুধুমাত্র তখনই ব্যবহার করেন, যখন খেলোয়াড়রা এই বিকল্পটি বেছে নেয়। এটি মাঠের আম্পায়ারের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত থেকে ভিন্ন।

Read More:- টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পাওয়ারপ্লে স্কোর

ডিআরএস কীভাবে কাজ করে?

ডিআরএস ব্যবহার করা হয় যখন ব্যাটিং বা ফিল্ডিং দল মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। এটি সাধারণত এলবিডব্লিউ (LBW) আউট অথবা ক্যাচ-আউট নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ব্যাটসম্যানের পক্ষে ডিআরএস নেওয়ার কারণ:

  • যদি ব্যাটসম্যান মনে করে তাকে ভুলভাবে এলবিডব্লিউ আউট দেওয়া হয়েছে।
  • যদি মনে হয় বল ব্যাটে লাগেনি অথচ তাকে ক্যাচ আউট দেওয়া হয়েছে।

ফিল্ডিং দলের পক্ষে ডিআরএস নেওয়ার কারণ:

  • যদি ফিল্ডিং দল মনে করে, আম্পায়ার ভুলভাবে আউট ঘোষণা করেননি।
  • সাধারণত এলবিডব্লিউ বা ক্যাচ-আউটের ক্ষেত্রে এটি হয়।

ডিআরএস শুধুমাত্র “আউট” বা “নট আউট” সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, আইপিএলে (IPL) ডিআরএস “ওয়াইড বল” পর্যালোচনার জন্যও ব্যবহার করা যায়।

তৃতীয় আম্পায়ার কী পরীক্ষা করেন ডিআরএসে?

ডিআরএস নেওয়ার পরে তৃতীয় আম্পায়ার মাঠের আম্পায়ারের সাথে যোগাযোগ করেন।
১. বোলিং বৈধ কিনা চেক করা: প্রথমেই দেখা হয় বলটি বৈধভাবে ডেলিভার করা হয়েছে কি না (যেমন নো বল)।
২. ক্যাচ বা এলবিডব্লিউর রিভিউ: এরপর রিপ্লে দেখে বল ব্যাট বা প্যাডে লেগেছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য Real Time Snicko (RTS) বা Ultra-Edge এবং Hotspot প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
৩. বল ট্র্যাকিং: এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বলের প্রক্ষেপণ দেখে নিশ্চিত করা হয়।

পর্যালোচনা শেষে তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন:

  • মূল সিদ্ধান্ত বহাল রাখা।
  • মূল সিদ্ধান্ত বদলানো।

ডিআরএসে আম্পায়ারের কল (Umpire’s Call) কী?

প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও কখনো কখনো রিভিউতে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই ক্ষেত্রে “আম্পায়ারের কল” নামক নিয়মটি ২০১৬ সালে চালু হয়।

  • আম্পায়ারের কল কবে প্রযোজ্য?
    এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তে বলের প্রভাব (impact), পিচ করার এলাকা, বা স্টাম্পে বল লাগার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ হলে মূল সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
  • ব্যবহারকারীর রিভিউ বাঁচে কিনা?
    যদি আম্পায়ারের কল প্রভাব ফেলে, তবে দল তাদের রিভিউ ধরে রাখতে পারে।

ডিআরএসের ইতিহাস ও পরিবর্তন

ডিআরএস প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাইয়ে, ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজে। এটি তখন UDRS নামে পরিচিত ছিল। ২০০৯ সালে আইসিসি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটে চালু করে।

পরিবর্তনের সময়কাল:

  • ২০১৩: প্রতি ৮০ ওভারে দলগুলিকে নতুন রিভিউ দেওয়া শুরু হয়।
  • ২০১৬: এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত আরও সঠিক করতে স্টাম্পের সংযোগ ফ্রেম বাড়ানো হয়।
  • ২০১৭: টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ডিআরএস বাধ্যতামূলক করা হয়।
  • ২০১৮: আইপিএলে প্রথমবার ডিআরএস ব্যবহৃত হয়।

ডিআরএস টাইমার কী?

ডিআরএস নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়দের হাতে ১৫ সেকেন্ড সময় থাকে। এই সময়টি শুরু হয় বল খেলার বাইরে যাওয়ার পর থেকে।

ধাপসিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়কাল
ফিল্ডিং দলের অধিনায়কনট আউট সিদ্ধান্ত রিভিউ করার জন্য
আউট ব্যাটসম্যানআউট সিদ্ধান্ত রিভিউ করার জন্য

টেস্ট, ওডিআই ও টি-টোয়েন্টিতে ডিআরএস ব্যবহার

ফরম্যাটডিআরএস সীমা
টেস্টপ্রতি ইনিংসে ৩টি (২০২০-এর পরিবর্তন)
ওডিআইপ্রতি ইনিংসে ২টি
টি-টোয়েন্টিপ্রতি ইনিংসে ২টি

যদি রিভিউ সফল হয়, তবে দল রিভিউ ধরে রাখতে পারে।

Read More:- ২০২৩ সালের WTC ফাইনাল: যা কিছু আপনার জানা দরকার

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

ওডিআইতে কয়টি ডিআরএস পাওয়া যায়?
প্রতি ইনিংসে দুটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *