তালহা জুবায়ের

পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতি, একাগ্রতা– আর একজন তালহা জুবায়ের

‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’– ছোট বেলা থেকেই বাবা-মা কিংবা শিক্ষকের কাছে এমন কথা বহুবার শুনতে হয়েছিল। মূল কথাটা বেশ সহজ। পরিশ্রম, চেষ্টা কিংবা নিবেদন থাকলে জীবনে কেউ পেছনে পড়ে থাকে না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে নিজের কাজটা নিয়মিত করে গেলে সাফল্যটা ধরা দেবে কোনো এক ক্ষণে। জীবনের এই গল্পটা ক্রিকেট মাঠেও হয়ত ফোটে। আর সেটা খেলোয়াড়দের জন্য যতটা সত্য, কোচের ক্ষেত্রেও মিথ্যে নয় একদমই।

কোচ নিয়ে এত আলাপের কারণটা তালহা জুবায়ের। এই বিপিএলে ছিলেন খুলনা টাইগার্সের কোচ। সবশেষ চিটাগাং কিংসের বিপক্ষে খুলনার হার যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ম্যাচশেষে তালহা জুবায়েরের চোখজোড়া আলাদা করে মনে থাকারই কথা। ক্রিকেট মাঠে কোচদের সাধারণত দেখা যায় চুপচাপ কিংবা ঠান্ডা মেজাজে। তবে তালহার ক্ষেত্রে উল্টোটা, প্রতিটা বলেই যেন জয়লাভ করার তীব্র আকুতি। যা নজর কেড়েছে দর্শকদেরও।

সাধারণত ফুটবল মাঠে কোচকে দেখা দেখা যায় এতটা ব্যস্ত। ৯০ মিনিটের খেলায় কোচ প্রতিটা মুহূর্তেই যুক্ত থাকেন খেলার সঙ্গে। সেখানে প্রতি মুহূর্তে বদলায় খেলার ফর্মেশন বা ট্যাকটিক্স। কোচেদের ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে তো অধিনায়ক আছেন, সেই চাপ সামাল দিতে। ক্রিকেটে কোচ অনেকটাই ফিলোসফার বা দার্শনিকের তত্ত্বে চলা মানুষ। কিন্তু তালহা জুবায়ের এই বিপিএলে সেই সংজ্ঞা বদলেছেন দারুণভাবে।

গতকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে চিটাগং কিংসের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে খুলনা টাইগার্স। ফাইনালে উঠার খুব কাছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি তা আর। আলিস আল ইসলামের ব্যাটে শেষ বলে চার হাঁকিয়ে জয় তুলে নেয় চিটাগাং। পরক্ষণেই খুলনার ডাগআউটে যেন পিনপতন নীরবতা। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফদের চোখে মুখে ছিল রাজ্যের হতাশা।

তালহা বলেন, “শেষ বলের ছবিটা আমি ভুলতে পারছি না। শেষ বলটি করার সময়, মুশফিকুর কোথায় বল করবেন তা নিয়ে একটু সন্দেহ ছিল। তার মন পরিষ্কার ছিল না। ম্যাচের আগে আমি সবাইকে বলেছিলাম যে কারও সন্দেহ নিয়ে বল করার দরকার নেই। সে সব বল ভালো বোলিং করেছে, কিন্তু শেষ বলে, সে ব্লক করবে নাকি লেন্থওয়াইজ বল করবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিল। তবে আমি তাকে দোষ দিচ্ছি না, মুশফিকই পরপর ২ উইকেট নিয়ে আমাদের খেলায় নিয়ে এসেছিলেন।”

মুশফিকুরের মতো তরুণ বোলারদের যখন এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তখন তাদের আবেগ ধরে রাখা কঠিন। তালহা বলেন, তিনি অনেক কেঁদেছেন। তবে, কোচ আশা করেন যে তরুণ পেসার এ থেকে শিখবেন, ‘সে অনেক কাঁদছে। আমরা তাকে বুঝিয়েছি যে মন খারাপ করার কিছু নেই। আমি আশা করি সে এ থেকে শিখবে। সে ভালো করছে এবং তার সামনে আরও সুযোগ রয়েছে।’

তালহা জুবায়ের হয়তো সোনালী ট্রফি চুম্বন করতে পারেননি। কিন্তু তার প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দর্শক এবং সমর্থকরা তালহার ঝলমলে চোখ অনেকদিন মনে রাখবেন।
ফাইনালে উঠতে না পারলেও, খুলনা দল দর্শকদের ভালোবাসা জিতেছে। স্টেডিয়ামের দর্শক থেকে শুরু করে টিভি সেটের সামনে যারা আছেন, সবাই খুলনার পরাজয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে এর সত্যতা স্পষ্ট। কোচ তালহা এমন সমর্থন সম্পর্কে বলছিলেন, ‘খুলনার দর্শকরা আমাদের অনেক সমর্থন করেছেন। তাদের জন্য আমার খারাপ লাগছে, আমি তাদের হতাশ করেছি। আমি আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ এলে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’

Also Read: Marcus Stoinis Retirement: ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অন্তর্ভুক্ত মার্কাস স্টোইনিস হঠাৎ অবসর নিলেন, কেন জানেন?

মাহমুদুল হাসান জয় খুলনা দলে ছিলেন। তবে, তিনি কোনও ম্যাচে সুযোগ পাননি, যে কারণে তালহাও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। খুলনা কোচ আফিফ সুযোগটি কাজে লাগাতে না পারার জন্যও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমি আফিফকে সুযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু সে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি। তা ছাড়া, আমি জয়কে একটিও ম্যাচ খেলতে দিতে পারিনি। যার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।”

খুলনা দলে কোনও বড় বিদেশি নাম ছিল না। তারপরও, তারা শুরু থেকেই খুব উপভোগ্য খেলা উপহার দিয়েছে। প্রতিপক্ষের দিকে নজর রেখে তারা স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফর্ম্যান্স দিয়ে লড়াই করেছে। তালহার তার শিষ্যদের প্রশংসা করতে কৃপণ নন, ‘নাঈম খুব ভালো খেলেছে এবং প্রতিটি ম্যাচেই তার সেরাটা চেষ্টা করেছে। গত ম্যাচে উইকেট খুব একটা ভালো ছিল না। মাহিদুল আঙ্কান, মিরাজ, রনি এবং বাকিরা তাদের সেরাটা চেষ্টা করেছে।’

তালহা জুবায়ের হয়তো সোনালী ট্রফি চুম্বন করতে পারেননি। কিন্তু তার প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দর্শক এবং সমর্থকরা অবশ্যই তালহার ঝলমলে চোখ অনেক দিন মনে রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *