পাওয়ারপ্লের উৎপত্তি
ফিল্ডিং বিধিনিষেধ হলো সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করতে চালু হওয়া অনেক উদ্ভাবনের একটি। ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লে প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে। এরপর ১৯৮০-এর দশকে কেরি প্যাকার-এর ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটে এটি গৃহীত হয়। একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পাওয়ারপ্লে ব্যবহার করা হয় ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৫ সালে এটি সমস্ত ওডিআইতে মানকরণ করা হয়।
Read More:- IPL-এ সবচেয়ে জনপ্রিয় দল কোনটি?
ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লে কীভাবে কাজ করে?
ওডিআইতে প্রথম ১৫ ওভারে পাওয়ারপ্লের নিয়ম অনুসারে ৩০ গজের বৃত্তের বাইরে কেবল দুইজন ফিল্ডার থাকতে পারতেন। ১৯৯০-এর দশকে অনেক দল এই সীমাবদ্ধতার সুবিধা নিতে “পিঞ্চ হিটার” নামিয়ে দ্রুত রান সংগ্রহ করার কৌশল গ্রহণ করত।
প্রথম ১৫ ওভারের মারমুখী ব্যাটিংয়ের পর খেলা ধীরে চলত এবং শেষে আবার গতি পেত। এই কারণে ২০০৫ সালে আইসিসি পুরো ৫০ ওভারজুড়ে উত্তেজনা ধরে রাখতে নতুনভাবে পাওয়ারপ্লে চালু করে।
ওডিআইতে পাওয়ারপ্লে নিয়মের বিবর্তন
প্রথম পাওয়ারপ্লে সিস্টেম
শুরুর দিকে পাওয়ারপ্লে তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ফিল্ডিং বিধিনিষেধ ছিল। পরবর্তী দুই পাওয়ারপ্লে, ৫ ওভার করে, বোলিং দল সিদ্ধান্ত নিত কখন নিতে চায়।
২০১২ সালের আগে, নন-পাওয়ারপ্লে ওভারগুলোতে ৫ জন ফিল্ডারকে বৃত্তের বাইরে রাখার অনুমতি ছিল। পরবর্তীতে ব্যাটিং দলের সুবিধা কমাতে আইসিসি ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে চালু করে।
২০০৮ সালের পরিবর্তন
২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাটিং দল দ্বিতীয় বা তৃতীয় পাওয়ারপ্লে কখন নেবে তা বেছে নেওয়ার অধিকার পায়। নন-ম্যান্ডেটরি পাওয়ারপ্লে ওভারগুলোতে ৩ জন ফিল্ডার বৃত্তের বাইরে থাকতেন।
২০১২ সালের নতুন নিয়ম
২০১২ সালে আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয় যে বোলিং ও ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে ১৬ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে নেওয়া যাবে। এছাড়া নন-পাওয়ারপ্লে ওভারগুলোতে বৃত্তের বাইরে ফিল্ডারের সংখ্যা ৫ থেকে কমিয়ে ৪ জন করা হয়।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর পাওয়ারপ্লে নিয়ম
২০১৫ সালে আইসিসি নতুন করে ওডিআই পাওয়ারপ্লে নিয়ম চালু করে। ইনিংসটি তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়:
- প্রথম পাওয়ারপ্লে (১-১০ ওভার): বৃত্তের বাইরে ২ জন ফিল্ডার।
- দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লে (১১-৪০ ওভার): সর্বোচ্চ ৪ জন ফিল্ডার।
- তৃতীয় পাওয়ারপ্লে (৪১-৫০ ওভার): সর্বোচ্চ ৫ জন ফিল্ডার।
নিয়ম অনুসারে, যদি বৃত্তের বাইরে অতিরিক্ত ফিল্ডার থাকে তবে তা নো-বল ঘোষণা করা হয় এবং ব্যাটিং দল পরবর্তী ডেলিভারিতে ফ্রি হিট পায়।
টি২০ ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লে
টি২০ ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লে হলো ইনিংসের প্রথম ৬ ওভার। এই সময়ে বৃত্তের বাইরে কেবল ২ জন ফিল্ডার থাকতে পারেন। টি২০তে একটি মাত্র পাওয়ারপ্লে রয়েছে এবং ওডিআইয়ের মতো এখানেও অতিরিক্ত ফিল্ডার রাখলে নো-বল ও ফ্রি হিটের নিয়ম প্রযোজ্য।
পাওয়ারপ্লের বিশেষত্ব
টি২০তে পাওয়ারপ্লে ব্যাটসম্যানদের দ্রুত বড় শট খেলার সুযোগ করে দেয়। একইসাথে বোলারদের জন্যও সুযোগ থাকে ব্যাটসম্যানদের প্রতারণা করে আউট করার।
সবচেয়ে সফল পাওয়ারপ্লে (ওডিআই – প্রথম ১০ ওভার)
দল | প্রতিপক্ষ | স্কোর | ইনিংস | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
শ্রীলঙ্কা | ইংল্যান্ড | ১৩৩/০ | ২ | শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জিতেছে |
অস্ট্রেলিয়া | নিউজিল্যান্ড | ১১৮/০ | ১ | অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে জিতেছে |
নিউজিল্যান্ড | শ্রীলঙ্কা | ১১৮/০ | ২ | নিউজিল্যান্ড ১০ উইকেটে জিতেছে |
নিউজিল্যান্ড | ইংল্যান্ড | ১১৬/২ | ২ | নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জিতেছে |
শ্রীলঙ্কা ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৩ রান করে ওডিআইয়ের প্রথম ১০ ওভারে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়ে।
সবচেয়ে সফল পাওয়ারপ্লে (টি২০আই – প্রথম ৬ ওভার)
দল | প্রতিপক্ষ | স্কোর | ইনিংস | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
রোমানিয়া | সার্বিয়া | ১১৬/০ | ২ | রোমানিয়া ১০ উইকেটে জিতেছে |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ১০২/০ | ২ | দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জিতেছে |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | শ্রীলঙ্কা | ৯৮/৪ | ২ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জিতেছে |
রোমানিয়া সার্বিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৫.৪ ওভারে ১১৬ রান তাড়া করে টি২০আইয়ের পাওয়ারপ্লে-তে ইতিহাস তৈরি করে।
Read More:- আরসিবির অবিশ্বাস্য লড়াই: আইপিএলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর রক্ষা
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
একদিনের ক্রিকেটে কতগুলো পাওয়ারপ্লে থাকে?
২০১৫ সালের নিয়ম অনুযায়ী, ওডিআই ম্যাচে তিনটি পাওয়ারপ্লে থাকে: প্রথম ১০ ওভার, ১১-৪০ ওভার, এবং ৪১-৫০ ওভার।